মোংলা বন্দর থেকে ২ কোটি টাকার প্রাডো গাড়ি লাপাত্তা

য়া কাগজ দেখিয়ে মোংলা বন্দরের শেড থেকে ২ কোটি টাকা মূল্যের একটি বিলাসবহুল ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো গাড়ি নিয়ে গেছে প্রতারক চক্র। এতে সরকার হারিয়েছে প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব। ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে মঙ্গলবার রাতে বন্দরের সহকারী ট্রাফিক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বাদি হয়ে মোংলা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।পুলিশ ও বন্দর কর্তৃপক্ষের একাধিক সূত্র জানায়, গত সোমবার বিকালে অফিস ছুটির পর বন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মেসার্স খাজা শিপিংয়ের পরিচয় দিয়ে মূল গেটের দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের কাছে গাড়ি ছাড়ের কাগজপত্র দাখিল করেন একজন চালক। পরে ওই ব্যক্তি জেটির ৫নং ইয়ার্ড থেকে মুক্তা রংয়ের ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো ১৮ মডেলের একটি গাড়ি নিয়ে গেট থেকে সটকে পড়েন। বিলাসবহুল ওই গাড়িটির খোঁজ পড়ে মঙ্গলবার সকালে অফিস চলাকালীন। ঘটনাটি দ্রুত বন্দর চেয়ারম্যানকে জানান ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। এ নিয়ে জরুরি বৈঠকও হয় চেয়ারম্যানের কক্ষে। বৈঠক শেষে বন্দর থেকে গাড়ি নিখোঁজের বিষয়টি মৌখিকভাবে কাস্টমসের মোংলা শুল্ক বিভাগকে অবহিত করা হয়। পাশাপাশি মোংলা থানায়ও জানানো হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে। এ বিষয় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা লেপ্টেনেন্ট কমান্ডার আলিম জানান, জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বিলাসবহুল ওই গাড়িটি বন্দর থেকে বের করে নেয় সংঘবদ্ধ চক্র।

গাড়ি ছাড়াতে যেসব কাগজপত্র ব্যবহার করা হয়, তার সবগুলোই ছিল ভুয়া। গাড়িটি পাচারের সঙ্গে বন্দরের কেউ জড়িত কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।তিনি আরও জানান, ঘটনা তদন্তে বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক ও তড়িৎ) লেপ্টেনেন্টে কর্নেল মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা লেপ্টেনেন্ট কমান্ডার আলিম, ঊর্ধ্বতন হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মাহাতাব গোলদার ও সিনিয়র ডিএম আবুল কালাম আজাদ।মোংলা থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মো. ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, বন্দর থেকে গাড়ি নিখোঁজের ঘটনা জানার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেও রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টাসহ গাড়িটি উদ্ধারের প্রচেষ্টা চলছে।সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বন্দর ইয়ার্ড থেকে দামি গাড়ি পাচারের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন মোংলা কাস্টমস (জেটি) হাউজের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, গাড়ি বের হওয়ার বিষয়টি কাস্টমসকে গতকাল দুপুরে জানানো হয়েছে। দায়িত্বে থাকা কাস্টমস কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর নকল করেই এ কাজ করা হয়। তিনি বন্দরের নিরাপত্তা বিভাগ ও ইয়ার্ডের ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।তবে কাস্টমসের ভূমিকা ও কর্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি বলেন, দামি ওই গাড়িটি যেদিন বন্দর জেটি থেকে বের হয় একই দিন বিভিন্ন সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট আরও প্রায় ৮০ থেকে ৯০টি গাড়ি ছাড় করিয়ে নেয়। এর কোনো এক ফাঁকে ওই গাড়িটিও জেটির মূল গেট থেকে বাইরে চলে আসে।এ প্রসঙ্গে মোংলা কাস্টমস হাউজের যুগ্ম-কমিশনার প্রণয় চাকমা জানান, বন্দর থেকে পাচার হয়ে যাওয়া বিলাসবহুল ল্যান্ড ক্রুজার প্রাডো গাড়িটির কাস্টমস ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। জালিয়াতির মাধ্যমে এ গাড়িটি পাচার হয়ে যাওয়ায় কাস্টমস প্রায় ১ কোটি টাকার রাজস্ব হারিয়েছে।মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর একেএম ফারুক হাসান বলেন, এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিভাগের দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।এর আগেও একই কায়দায় প্রতারক চক্র একটি বিএমডব্লিউ গাড়ি ও কন্টেইনার ভেঙে কোটি টাকার কাপড় চুরি করে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে জেটির ভেতর থেকে অসৎ উদ্দেশ্যে অনুমতিবিহীনভাবে একটি কন্টেইনার বাইরে নিয়ে আসেন তড়িৎ ও যান্ত্রিক বিভাগের অপারেটর মিজানুর রহমান। পরে তিনি মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা পান।